DinajpurInfo.com logo
 
প্রবেশ করুন | দিনাজপুরিয়া? সদস্য নন? যোগদিন

DinajpurInfo.com
রামসাগরের উপকথা

কিন্তু রাজার আনন্দ বিষাদে পরিণত হলো যখন জ্যোতিষীরা রাজকুমারের ভবিষ্যৎবাণী করলেন – রাজপুত্র বীর ও বিদ্বান হবেন ও তার খ্যাতিতে মুখর হয়ে উঠবে সারা দেশ, কিন্তু তিনি হবেন স্বল্পায়ু; পরহিতব্রতে আত্মদান করে অমর হবেন তিনি।

আনন্দ ও বিষাদে কাল উত্তরণ করে রাজপুত্র যৌবনে পদার্পণ করলেন। বৃদ্ধ রাজা স্থির করলেন যুবরাজকে অভিষিক্ত করে তিনি ধ্যনগ্রস্থ হবেন। অভিষেক উৎসবের আয়োজন করা হলো। দেশ ও বিদেশ থেকে বহু রাজা মহারাজা আমন্ত্রিত হয়ে এলেন। মুখরিত হলো রাজধানী ও রাজ্য। ঠিক এমনি সময় দুঃসংবাদ এলো শত্রুসৈন্যের আক্রমণের, শত্রুরা রাজধানীর উপকন্ঠে সমাগত প্রায়। ভয়ানক এই সংবাদে নর্তকীদের চটুল নৃত্য থেমে গেল, অভিষেক উৎসব স্তব্ধ হয়ে গেল, বেজে উঠল রণদামামা, চারিদিকে সাজ সাজ রব পড়ে গেল। যুদ্ধে যুবরাজ রাম সেনাপতিত্বের দায়িত্ব নিলেন।

বর্তমানে রামসাগর দীঘিটি যে স্থানটিতে ঠিক সেই স্থানে বাঁধল ভয়ংকর যুদ্ধ। অজস্র শত্রুসৈন্য নিধন করে যুদ্ধ জয় করলেন যুবরাজ রাম। রাজ্যে আবার শান্তি ফিরে এল।

কিন্তু সুখ ও দুঃখ, আনন্দ ও বিষাদ – সবই  বিধির বিধান , মানুষের নিয়ত্রনের বাইরে।
একদিকে দেশ শত্রু মুক্ত হলো বটে কিন্তু অন্যদিকে দেশ জুড়ে নেমে এল খেয়ালী প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা - শুরু হল একটানা অনাবৃষ্টি। সারা মৌসুমে এক ফোঁটা পানি পড়লো না আকাশ থেকে। মাটি ফেটে চৌচির হল। মাঠের শস্য মাঠেই মরে গেল। অগ্নিঝরা রোদে গাছের পাতা পর্যন্ত শুকিয়ে ঝরে গেল। ফলশ্রুতিতে দেখা দিল দারুণ আকাল।

খাদ্যের অভাবে মারা পড়ল বহু মানুষ। দয়ালু রাজা প্রজাদের জন্য অন্নসত্র খুলে দিলেন, উজাড় করে দিলেন রাজ ভান্ডার। হাজার হাজার লোক প্রাণে বাঁচলো বটে কিন্তু প্রচন্ড অভাব দেখা দিল পাণীয় জলের। কারণ দীর্ঘ অনাবৃষ্টি ও খরায় খাল-বিল, দীঘি-কূপ, নদী-নালা সবই পানি শুন্য। "পানি, পানি" করে হাহাকার উঠল।

এবার দয়ালু রাজা স্থির করলেন বিরাট এক দীঘি খনন করবেন যাতে পানীয় জলের অভাব মিটবে এবং দুর্ভিক্ষপীড়িত, কর্মহীন প্রজাদের খাদ্যের সংস্থান হবে।

রাজধানীর দক্ষিণে, যেখানে যুবরাজ রাজ শত্রুসেনাদের পরাজিত করেন – বিজয়ের প্রতীক হিসেবে সেই স্থানটি দীঘি খননের জন্য মনোনীত হয়। প্রণীত হয় বিশাল দীঘির নক্সা।

অতঃপর শুরু হলো দীঘি খননের কাজ। হাজার হাজার শ্রমিক মজুর নিয়োজিত হল। কোদালের লক্ষ লক্ষ আঘাতে উঠে আসতে লাগলো মাটি। দীঘির মাটি চারিদিকে স্তুপীকৃত হয়ে পাড়গুলি পর্বতাকার ধারণ করল। আসুরিক কর্ম-কোলাহলের মধ্য দিয়ে মাত্র এক পক্ষকালের (আধ মাস) মধ্যেই সম্পন্ন হল দীঘির খনন কাজ।

কিন্তু হায়! এত প্রকান্ড ও গভীরকরে খনন করা সত্বেও দীঘির বুকে উঠল না এক ফোঁটা পানি।

হতাশায় ও দুর্ভাবনায় বৃদ্ধ রাজা আহার-নিদ্রা ত্যাগ করলেন। অমঙ্গলের ও অভিশাপের লক্ষণে সবাই বিমর্ষ হয়ে পড়ল। এমন কি, অত্যাসন্ন মৃত্যুর আশংকায় ঘরে ঘরে মহাকান্নার রোল উঠল। মুসলমানরা দরগায় শিরণী দিল – হিন্দুরা দিল পশু বলি। তবুও দীঘির বুকে জলের দেখা মিলল না।

চিন্তায় বিহবল রাজা বৈশাখের এক পূর্ণিমা ঝলমলে রাতে স্বপ্নে দেখলেন এক দেবপূরুষকে। সেই দেবপুরুষ জানালেন তার একমাত্র পুত্রকে দীঘির গর্ভে ডুবিয়ে বলি দিলেই তবে পানি উঠবে দীঘিতে। স্বপ্নাদেশ নয় – যেন বজ্রাদেশ । ঘুমের ঘোরেই চীৎকার করে পালংক থেকে মাটিতে পড়ে গেলেন রাজা। রাণী ও দাসদাসীরা ছুটে এল। রাজার মুখে দৈববাণী শুনে অন্তঃপুরে নারীরা আর্তনাদ করে উঠল। সকলের মুখে এক কথা-  রাজপুত্রকে বলি দিয়ে নিজেদের প্রাণ রক্ষা করতে কেউ রাজী নয়।

কিন্তু রাজপুত্রের মুখে কোন ভাবান্তর নেই। তিনি নিজ প্রাণের বিনিময়ে মরণোম্মুখ প্রজাদের জীবন রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন।

তার নির্দেশক্রমে সঙ্গে সঙ্গে দীঘির মধ্যস্থলে একটি ছোট (সুবর্ণ কিম্বা স্বর্ণ) মন্দির নির্মিত হল। তারপর চারিদিকে গ্রামে গ্রামে ঢোল বাজিয়ে প্রজাদের জানিয়ে দেয়া হল – আগামীকাল প্রত্যুষে দীঘির বুকে জল উঠবে । এ সংবাদে প্রজারা আনন্দ ও উল্লাসে আত্মহারা হয়ে উঠলো।

ভোর না হতেই রাজবাড়ীতে নাকাড়া বেজে উঠল। বিরাট সিংহদ্বার খুলে গেল। চতুরঙ্গ- পদাতিক, অশ্বারোহী, হস্তিসেনা ও রথীবৃন্দ- সেই দ্বার দিয়ে প্রাসাদ-প্রাঙ্গণে সমবেত হল। প্রাসাদ থেকে রাজপুত্র রামনাথকে নিয়ে শোকাহত, বিষন্ন ও নিস্তব্ধ মিছিল চলল শহরের দক্ষিণে খননকৃত নতুন দীঘির দিকে। হাতির পিঠে রাজা-রাণী বাকরুদ্ধ। কিন্ত রাজপুত্রের মুখমন্ডল প্রশান্ত ও সুপ্রসন্ন।

মিছিল দীঘিটির পশ্চিম ঘাটে এসে থামলো। দীঘির চারপাড়ে সমবেত হাজার হাজার দুখাকুল, অশ্রুসজল প্রজা। যুবরাজ হাতির পিঠ থেকে নেমে মাতাপিতা ও উপস্থিত সবাইকে প্রণাম করলেন। তারপর সোনার থালায় পূজার উপাচার দুহাতে তুলে নিলেন এবং পাথরে বাধানো ঘাটের সিড়ি বেয়ে মন্থর পদক্ষেপে নেমে গেলেন দীঘির মধ্যস্থলে মন্দিরের দিকে। রুদ্ধশ্বাসে ও অপলক নেত্রে সকলে চেয়ে রইল রাজপুত্রের দিকে।

মন্দির দ্বারে পুজার নৈবেদ্যের থালা রাখতেই- আর যায় কোথায়? বিশ্বপ্রকৃতি যেন গর্জন করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে দীঘির তলদেশ বিদীর্ণ হয়ে গেল এবং অজস্র ধারায় পানি উঠতে লাগলো। রাজকুমারকে ফিরে আসার কোন অবকাশ না দিয়েই উদ্বেলিত জলধারায় প্লাবিত হয়ে গেল দীঘির তলদেশ।

প্রথমে পানি উঠল রামনাথের পা পর্যন্ত, তারপর কোমর, কাধ এবং তারপর পানি উঠল মাথার উপর। চোখের পলকে জলমগ্ন হয়ে গেল বিশাল দীঘি। রাজকুমারকে আর দেখা গেলনা। হাহাকার করে উঠল প্রজাকুল, রাজারাণী বসে রইলেন পাথরের মূর্তির মত।

বিপন্ন প্রজাদের স্বার্থে যে যুবরাজ সলিল সমাধি আত্মবিসর্জন দিলেন, গুণমুগ্ধ প্রজারা সেই মহান যুবরাজের পূণ্য স্মৃতিকে অমর করে রাখল সেই দীঘিরই করুণ কাহিনীর অন্তরালে। দীঘির নাম হলো রামসাগর

অপর একটি উপকথা অনুযায়ী রাজকুমার রামনাথকে নয়, রাজরাণীকে বিসর্জন দেয়া হয় দীঘিতে। স্থানীয় প্রবীণদের মুখে রাণীর উপকথাই বেশি প্রচলিত এবং জনপ্রিয়। এই উপকথা অনুযায়ী বিশেষ বিশেষ রাতে মৃত রাণী চান্দা (বা বড়) মাছের রুপ ধরে দীঘির জলে ভেসে বেড়ান এবং জীবদ্দশায় রাজা তার প্রিয় রাণীর দেখা পেতে  সেই সময়গুলোতে রামসাগরে আসতেন ও কেঁদে বুক ভাসাতেন।
লিখেছেন :
আলমামুন
 
মন্তব্য (0)Add Comment

মন্তব্য লিখুন
bold italicize underline strike url image quote Smile Wink Laugh Grin Angry Sad Shocked Cool Tongue Kiss Cry
ছোট | বড়

security code
উপরের বর্ণগুলো লিখুন


busy
কথিত আছে পুরাকালে এই অঞ্চলে এক রাজা ছিলেন – নাম প্রাণনাথ (কিংবদন্তীতে হরিশচন্দ্র)। সুশাসক ও প্রজাপ্রিয়  রাজা বলে দেশজোড়া তার খ্যাতি ছিল, আর ছিল  অফুরন্ত ঐশর্য্য। ধন ও ধান্যে পরিপূর্ণ ছিল তার রাজত্ব। কিন্তু রাজার মনে ছিল না কোন শান্তি। কারণ তার কোন পুত্র সন্তান ছিল না এবং সন্তান হবার বয়সও ছিল না। রাজার অবর্তমানে কে ভোগ করবে তার এই অগাধ সম্পত্তি, কে বসবে তার সোনার সিংহাসনে? তাই ভোগবিলাস ‌আর প্রতাপ প্রতিপত্তি কিছুই রাজাকে ভাল লাগতো না। সবসময় নৈরাশ্যের বেদনা রাজার মন ও প্রাণকে আচ্ছন্ন করে রাখত।

যাহোক, বহু পুজাঅর্চনা, যজ্ঞ ও দান দক্ষিণার ফলে দৈবকৃপায় রাজার মনস্কাম পূর্ণ হল - তার ঘরে জন্ম নিল এক দেব-দূর্লভ পুত্র সন্তান। রাজ্যব্যাপী আনন্দ ও উল্লাসের বন্যা বইল। শুভ একদিনে রাজপুত্রের নাম রাখা হলো রাম।
 

দর্শক সংখ্যা

আজ 237
গতকাল 352
এই সপ্তাহে 1817
গত সপ্তাহে 2248
এই মাসে 8399
গতমাসে 7964
মোট 87327
Visitors Counter

নতুন মুখ

অতিথি বহিতে...

nice job! ..i was surprise to see some one build an web page about..where i was born and where my family lives...
I'm very glad to visit this site..I would like to involve to you. I hope you will contact to me.

জানিয়ে দিন

এই সাইট টি আপনাদের ভাল লেগে থাকলে অন্যদের জানান

আপনার নাম

Your e-mail

Your friend's e-mail  [-] [+]

বার্তা [+]