ঘোড়াঘাটের সুরা মসজিদ দিনাজপুর জেলার স্থাপত্য শিল্পের এক অপরূপ নিদর্শন। মসজিদটি ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ থেকে প্রায় পাঁচ কিঃ মিঃ পশ্চিমে হিলি-ঘোড়াঘাট সড়কের উত্তর পার্শ্বে চোরগাছা মৌজfয় অবস্থিত। মসজিদটি সুরা নামক স্থানে নির্মিত বলে এটি সুরা মসজিদ নামে পরিচিতি। কেউ কেউ এটিকে সুজা মসজিদ নামেও অভিহিত করেন।
ঘোড়াঘাটের সুরা মসজিদ দিনাজপুর জেলার স্থাপত্য শিল্পের এক অপরূপ নিদর্শন। মসজিদটি ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ থেকে প্রায় পাঁচ কিঃ মিঃ পশ্চিমে হিলি-ঘোড়াঘাট সড়কের উত্তর পার্শ্বে চোরগাছা মৌজfয় অবস্থিত। মসজিদটি সুরা নামক স্থানে নির্মিত বলে এটি সুরা মসজিদ নামে পরিচিতি। কেউ কেউ এটিকে সুজা মসজিদ নামেও অভিহিত করেন।
মসজিদটির উত্তর পার্শ্বে ৩৫০´২০০ গজ (প্রায়) আয়তনের একটি প্রাচীন দীঘি রয়েছে। দীঘির ১৫ ফুট উঁচু পাড়গুলো বেশ প্রশস্ত। দক্ষিণ পাড়ের মধ্যভাগে একটি প্রশস্ত ঘাট রয়েছে। কারো কারো মতে ঘাটটি প্রায় ৫০ ফুট প্রশস্ত ছিল। দীঘির ঘাট থেকে প্রায় ১০০ ফুট দক্ষিণ-পশ্চিমে দীঘির দক্ষিণ পাড়ের পশ্চিমাংশের দক্ষিণ দিকে এবং সদর সড়কের উত্তর দিক বরাবর প্রায় ৫ ফুট উঁচু একটি সমতল পাটফর্ম রয়েছে। পূর্ব পশ্চিমে দীর্ঘ এ পাট ফর্মের আয়তন প্রায় ১০০´৫০ ফুট।
এ পাট ফর্মের পশ্চিম ভাগেই সুলতানী বাংলার অনন্য স্থাপত্য সুরা মসজিদ অবস্থিত। মসজিদটির একটি বর্গাকার এক গম্বুজ বিশিষ্ট নামাজ কক্ষ (জুলাহ) এবং পূর্ব ভাগে ছোট তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বারান্দা রয়েছে। এরূপ নকশার মসজিদ উত্তর বাংলায় পঞ্চদশ শতকের শেষ দিকে এবং ষোড়শ শতকে খুবই জনপ্রিয় ছিল। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ বহির্দেয়ালে ব্যবহৃত ইটের সূক্ষ্ম নকশার সাদৃশ্য পাওয়া যায় ১৫২৩ সালে নির্মিত রাজশাহীর বাঘা জামে মসজিদের সাথে।
মসজিদের আয়তন বাইরের দিকে ৪০´৬০ ফুট। মসজিদটি পূর্ব-পশ্চিমে দীর্ঘ। মসজিদের বাইরে চারকোণায় ৪টি এবং বারান্দায় দুইকোণে ২টি মোট ছয়টি অষ্টভূজাকৃতি গম্বুজ রয়েছে। এটি সমসাময়িক স্থাপত্যের প্রতিফলন। এই গম্বুজগুলি মসৃণ কালো পাথরে আবৃত। মসজিদের সমগ্র বহির্দেয়াল একটি পাথরের বর্ডার দ্বারা উপর নীচ দু’ভাগে বিভক্ত।
পূর্বদিকে তিনটি খিলানপথ দিয়ে মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে হয় এবং এই খিলানপথগুলোর বরাবরে বারান্দায় আরো তিনটি খিলানপথ দেখা যায়। যা দ্বারা বারান্দা থেকে নামাজ কক্ষে প্রবেশ করতে হয়। এ ছাড়া নামাজ কক্ষের উত্তর ও দক্ষিণে এবং বারান্দার উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে আরো চারটি প্রবেশ পথ রয়েছে। বর্গাকার নামাজ কক্ষটির আয়তন ভিতরের দিকে ১৬ ´ ১৬ ফুট। পূর্বদিকের বারান্দাটির আয়তন ভিতরের দিকে ১৬ ´ ৭ ফুট। ইমরাতের পশ্চিম ও পূর্বদিকের দেয়ালের প্রশস্ততা ৬ ফুট এবং উত্তর-দক্ষিণ ও বারান্দার পূর্ব দেয়াল প্রত্যেকটি ৫ ফুট প্রশস্ত। মসজিদের নামাজকক্ষের উপরে একটি বৃহৎ গম্বুজ এবং বারান্দায় তিনটি সমআকৃতির ছোট গম্বুজ এবং বারান্দায় তিনটি সমআকৃতির ছোট গম্বুজ ব্যবহৃত হয়েছে। ইমারতের অভ্যন্তরে ইটের গাঁথুনির উপরে পাথরের মোটা আবরণ ছাদ পর্যন্ত উঠে গেছে।
এখানে পশ্চিম দেয়ালে মোট তিনটি মেহরাব রয়েছে। মেহরাব নির্মাণে পাথর ব্যবহৃত হয়েছে। সুলতানী স্থাপত্য রীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য বক্রাকার কার্নিশ ছাদে দেখা যায়। বৃষ্টির পানি সহজে নেমে যাবার জন্য বাংলার দোচালা ও চৌচালা কুঁড়ে ঘরের ন্যায় ঢালু ছাদ সৃষ্টি করা হয়েছে। মসজিদের অবতলাকৃতির মেহরাব তিনটির মধ্যবর্তী মেহরাবটি অপেক্ষাকৃত বড় । কেন্দ্রীয় মেহরাবের বাইরে কিছু অংশ উদগত রয়েছে। মসজিদটি নির্মানে প্রধানত ইট ব্যবহৃত হলেও মসজিদের প্রায় এক চতুর্থাংশ স্থান জুড়ে পাথরের ব্যবহার দেখা যায়। মসজিদের প্রত্যেক প্রবেশ পথে ব্যবহৃত চৌকাঠ পাথরের তৈরী। মসজিদের পাটফরমটির চারদিকে ইট নির্মিত প্রশস্ত প্রাচীর ছিল বলে দৃষ্ট হয়। এখনও পাটফর্মের নীচের দিকে বিভিন্ন স্থানে প্রাচীরের চিহ্ন বিদ্যমান। পূর্বদিকের দেয়াল প্রায় অটুট রয়েছে। সেদিকেই মসজিদের প্রবেশপথের সিঁড়ি। সিঁড়িতে ব্যবহৃত পাথরগুলো মূর্তি উৎকীর্ণ ছিল, যা এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন। এতে মুসলিম স্থাপত্যে হিন্দু স্থাপত্য উপকরণ ব্যবহারের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। মসজিদের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এবং দীঘির ঘাটে অসংখ্য প্রস্তরখন্ড পাওয়া যায়। মসজিদের উত্তর দিকে একটি উন্নতমানের বেলে পাথরের একটি ছোট নারী মুর্তি উৎকীর্ণ ছিল। তবে মূর্তিটির পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। আ কা মো যাকারিয়া ইমারত স্থলে প্রচুর পরিত্যক্ত প্রস্তরখন্ড ও মূর্তির প্রতিকৃতি দে্েরখ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, এখানে একটি মন্দির ছিল এবং পাথরগুলো সে মন্দিরে ব্যবহৃত ছিল (বাংলাদেশ প্রতœসম্পদ)। ইমারতটিতে মসৃন পাথরের চমৎকার অলঙ্করণ দৃষ্ট হয়। এখানে ব্যবহৃত পাথরে খোদাই ও কাটা নকশা ছোট সোনা মসজিদকে স্মরণ করিয়ে দেয়। মসজিদের মেহরাবে পাথরের উন্নত কারুকার্য ব্যবহৃত হয়েছে। ইমারতে ইটের উপর অত্যন্ত সূক্ষ্ম খোদাই নকশা দেখা যায়। এখানে কোন শিলালিপি পাওয়া যায়নি। প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী এই মসজিদটিকে দেখার জন্য ভির জমায়। আবার অনেকে এখানে বিভিন্ন রোগ-শোক ও মনের কামনা বাসনা মিটানোর জন্য মানত করে। ঘোড়াঘাটের ঐতিহাসিক সুরা মসজিদ মুসলিম বিশ্বের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে গন্য করা হয়।
তথ্য কৃতজ্ঞতাঃ শাহাজাহান বাবু
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ মোহাম্মদ মিন্নাতুল্লাহ